দুরন্তপনার শৈশব কৈশর
কবির হোসেন:
জীবন থেকে হারিয়ে গেছে শৈশব ও কৈশরের দুরন্তপনার দিনগুলো।বিশেষ করে গ্রামের পথে হাটা, দল বেঁধে সাইকেলের ট্রায়ার চালানো, খালের পানিতে মাছ শিকারের নামে সারাদিন পানিতে হইহুল্লা করাসহ আরো কতো স্মৃতিই মনের দুয়ারে উকি দেয়। যে দিন গুলো ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
শহুরে জীবনে তো পাওয়াই হয়না মজার সে দুষ্টমীর স্থান ও সময়। সকাল হতে না হতেই স্কুলের ব্যগ নিয়ে পিচঢালা পথ পারি দিতে হয় শৈশবেই। যান্ত্রিক সব শব্দের ভীরে কখন যে শেষ হয়ে যায় সময়গুলো বুঝতেই পারা যায়না।
এমন কিছু ছবি নিয়েই তুলে ধরছি শৈশব আর কৈশরের ফেলে আসা কিছু চিত্র।
- একাকী রোদ্রময় দিনে বাড়ীর পাশের সবুজ ক্ষেতে আর ঘুড়ি উড়ানো হয়না। ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে মায়ের বকাঝকা খেয়ে অভিমানে করা হয়না কান্না।
- ফেলে দেয়া বেয়ারিং দিয়ে বানানো গাড়ীটি চালাতে কতো দিনই স্কুল ফাকি দেয়া হয়েছে। এ কাজের জন্য মায়ের হাতের পিটুনিরও কি হিসেব করে শেষ করা যাবে?
- মাঠের এ কোনায় একটিই গাছ। দাদা চলে আসার আগেই উঠতে হবে, বসতেও হবে পছন্দসই জায়গায়, তাই তো চলছে প্রতিযোগিতা, কে আগে উঠবে। কোন হিংসা নেই বলে সহযোগীতা করা হচ্ছে একে অপরকে। এই দিনকি আর আসবে?
- টানাটানি খেলার নামে ফেলে আসা গোধুলী বিকেলগুলো মনের কোনায় উকি মারে। সে দিন ফিরে আসবেনা তাই কষ্টের জায়গাগুলো পসারিত হয়।
- কারো আছে কারো নেই, তাতে কি, একবার তুই একবার আমি এভাবেই দৌড়িয়ে চলা সময়ে আশপাশের কোন কিছুই মৌহিত করতে পারেনি। শুনিদ্রিষ্ট সীমানা পারি দেয়া ছাড়া।
- ভাংঙ্গা একটি ব্রীজ, অথচ সে সময় আনোন্দ দেবার জন্য এটিই ছিল অনেক বড় উপকরণ। অনেকক্ষণ খেলে চোখ লাল করে বাড়ী ফিরলে মায়ের মুখের সচারাচর বকাঝকা ছিল নিয়মের মধ্যে একটি।
- পানিযুক্ত ফসলের মাঠ এটাও ছিল খেলার স্বর্গরাজ্য। নিজেদের ইচ্ছেমত খেলা। খেলা শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ী ফেরা। গোল হোক বা না হোক বলটা শুধু আমার কাছে থাকলেই হল। এমনটা্ই ছিল মনভাব।
- নদীতে আসছে বর্ষার নতুন পানি, সাতার না কাটলে কি হয়। পানি হোক অল্প কিংবা বেশি সাতার কিন্তু কাটতেই হবে। তাই দাড়িয়ে কিংবা সাতরিয়ে যেভাবেই হোক পানিক স্বাধটা নিতেই হবে।
- নদীতে ভেঙ্গে যাচ্ছে গ্রামের অনেক ঘরবাড়ী, তাতে কী, নদীর পারে দাড়িয়ে মজা করা থেকে কি বিরত থাকা যায়? কেও তো আবার তাকিয়ে আছে কে যায় এমন সময়ে।
- যে ভাবেই হোক ধরতে হবে, একা তো আর পারা সম্ভব না, তাই সবাই মিলে চলছে প্রচেষ্টা, কিভাবে বস করা যায় এই সুন্দর হাঁসগুলোকে। যারই হোক ধরতেই হবে, কারণ আমরা এখন শিকারী।
- এ খেলা আর দেখা হয় না। চাইলেই পরা হয়না লাল ধুতী। ভাঙ্গা গলায় গাওয়া হয়না এবরো থেবরো গান।
- মনে হয় এইতো সেদিনও ওদের সাথে ছিলাম। কিন্তু এখন আর সেভাবে সময় কাটানো যায়না। চাইলেই মায়ের কাছে কিংবা বাড়ীর পাশে ধানের ক্ষেতে আপন মনে ছুটে চলা হয়না। আকাশের তারাদের মত অনেক দুরে চলে গেছে সে দিন গুলো।
প্রতিক্ষণ/এডি/কেএইচ